News:

নির্ঝরের অগ্রযাত্রা্

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণতা বলে কিছু নেই। দিন দিন উৎকর্ষভিমুখে অগ্রযাত্রাই তার মূল লক্ষ্য। তাই নির্ঝরের অভিযাত্রা উৎকর্ষের দিকে। দিন দিন উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার প্রত্যয় নির্ঝরের মূলমন্ত্র।

 

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অনিন্দ্য সুন্দর নির্ঝর আবাসিক এলকায় গড়ে ওঠা নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজটি শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার আদর্শ মান বজায় রাখার পাশাপাশি মেধা বিকাশসহ সৃজন ক্ষমতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে অক্লান্তভাবে।

 

নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজটি ২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে এডাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে আজ এগিয়েছে অনেকদূর। সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং দেশ প্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার প্রসার এবং দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন করার নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অগ্রগামী হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এবং শিক্ষা, সততা ও উৎকর্ষের ব্রত নিয়ে দৃষ্টিপট সুবিস্তৃত আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা যা শিক্ষার্থীদের বিষয় মোকাবিলায় প্রস্তুত করে তুলছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম নিম্নে উল্লিখিত পাঁচটি সুনির্দিষ্ট মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত-

০১। উপযোগী পরিবেশে জাতীয় শিক্ষাবোর্ড ও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদ প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী শিক্ষা দান করা।

০২। পাঠ্য সহায়ক ও পাঠ্যক্রম বহির্ভূত সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করা।

০৩। নৈতিক, সামাজিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটিয়ে সামগ্রিক মান ও উৎকর্ষ বিকাশে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।

০৪। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একজন সচেতন দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করা।

০৫। সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আদর্শবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস গ্রহণ করা।

 

প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালনার জন্য অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধিসহ একটি সুদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক বিকাশে রয়েছে একটি সুসংহত ও সুদূর প্রসারী নীতিমালা। এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে পাবলিক স্কুল ও কলেজের নীতিমালা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সরকারি বেসরকারি নীতিমালাসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে। এ নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজটি মোট ৪১ জন শিক্ষক, ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্সারি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২২ টি সেকশনে ৭২৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এখন সপ্তম শ্রেণি ছাড়িয়ে স্কুল শাখায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি স্কুল ও কলেজ হলেও এতিদিন কলেজের কার্যক্রম চালু ছিল না। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে প্রতিষ্ঠানটি উৎকর্ষে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এখন প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার শিক্ষক মোট ৫৯ জন এবং কলেজ শাখার শিক্ষক মোট ৯ জন। সর্বমোট শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৫৭ জন। নার্সারি থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৩৭ টি সেকশনে এখন মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৪৬।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ২০১৭ সালে ৯২ জন পিইসিই ও ৫৯ জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এদের মধ্যে শতভাগ পাশসহ যথাক্রমে পিইসিইতে ৮৯ জন ও জেএসসিতে ৪৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করে সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে। বর্তমানে নার্সারি থেকে একাদশ শ্রেণির প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে উন্নত নেটওয়ার্ক পদ্ধতি। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জন্য রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। যেখানে রয়েছে ভাষা, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান ও চিত্রশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলি। বর্তমানে এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্য বই ধার নেওয়ার জন্য ডিজিটাল লাইব্রেরি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এতে করে সকলেই পছন্দসই বই নিজের কাছে রেখে পড়ার সুযোগ পাবে।

 

সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কম্পিটার কাম ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব। যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পাঠ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কোর্সের জন্য ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এই তিনটি ল্যাব। ল্যাব তিনটিতে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত অনুসঙ্গ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারি জ্ঞান প্রদান করা হচ্ছে।

 

শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিমনা এবং বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে নানাবিধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে ১৭ টি ক্লাব। ক্লাবগুলো প্রতিমাসের প্রথম তিন শনিবার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি ক্লাবে একজন ক্লাব কো-অর্ডিনেটরসহ কয়েকজন সদস্য শিক্ষক থাকেন।

 

এসব ক্লাব কার্যক্রম আরো ফলফ্রুসূ করার জন্য রয়েছে ’আমরা করবো জয়’ স্লোগান নিয়ে সাজেক হাউস, ‘সত্যই সুন্দর’ স্লোগান নিয়ে চিম্বুক হাউস, ‘মোরা ঝর্ণার মতো উচ্ছল’ স্লোগান নিয়ে কেওক্রাডং হাউস এবং ‘আমরা শক্তি আমরা বল’ স্লোগান নিয়ে বিজয় হাউস নামে চারটি হাউস। হাউস চারটির নাম বাংলাদেশের সুউচ্চ চারটি পাহাড়ের নামে করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা পাহাড়ের বিশালতার মতো উচ্চ মননশীল চিন্তা-চেতনা নিয়ে বেড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা চারটি হাউসে বিভক্ত হয়ে বার্ষিক ক্রীড়াসহ অন্যান্য নানাবিধ আন্তঃহাউস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বছরের সামগ্রিক কার্যক্রম বিবেচনা করে হাউসগুলোর মধ্য হতে পরবর্তী নতুন বছরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ ঘোষণা করা হয়।

 

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করে দিন দিন প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়িয়ে চলছে।

 

তাই অভিভাবকসহ শুভাকাঙ্ক্ষী সকলকে বলতে চাই; যে সুউচ্চ আদর্শ ও প্রত্যয় নিয়ে নির্ঝরের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে আগামীতে আমাদের প্রচেষ্টার সাথে আপনাদের অবদান প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। আর এই আকাশ ছোঁয়া উচ্চতর পৌঁছবার লক্ষ্যে নির্ঝরের যে অগ্রযাত্রা তা সফল হোক সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।